SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ 

বিকেলের নক্ষত্রের কাছে;

সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে 

নির্জনতা আছে। 

এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা 

সত্য; তবু শেষ সত্য নয়।

আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরে প্রাণ

পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো 

ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু, 

দেখেছি আমারি হাতে হয়ত নিহত

ভাই  বোন বন্ধু পরিজন প'ড়ে আছে; 

পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন 

মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।

সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে- এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে; 

সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ:

Content added By

আধুনিক বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্য গ্রহণ করেন। পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সেকালের বিখ্যাত কবি। মায়ের কাছ থেকে তিনি কবিতা লেখার প্রেরণা লাভ করেছিলেন। স্বল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করলেও মূলত ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন। কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতায় সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভবের এক জগৎ তৈরি করেন। বিশেষ করে গ্রামবাংলার নিসর্গের যে ছবি তিনি এঁকেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার তুলনা চলে না। সেই নিসর্গের সঙ্গে অনুভব ও বোধের বহুতর মাত্রা যুক্ত হয়ে তাঁর হাতে অনন্যসাধারণ কবিতাশিল্প রচিত হয়েছে। এই অসাধারণ কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "চিত্ররূপময়" বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া ব্যক্তিমানুষের নিঃসঙ্গতা, আধুনিক জীবনের বিচিত্র যন্ত্রণা ও হাহাকার এবং সর্বোপরি জীবন ও জগতের রহস্য ও মাহাত্ম্য সন্ধানে তিনি এক অপ্রতিম কবিভাষা সৃষ্টি করেছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন 'নির্জনতম কবি' বলে। উপমা, চিত্রকল্প, প্রতীক সৃজন, আলো-আঁধারের ব্যবহার, রঙের ব্যবহার এবং অনুভবের বিচিত্র মাত্রার ব্যবহারে তাঁর কবিতা লাভ করেছে অসাধারণত্ব। তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর বিশেষ স্থান রয়েছে। জীবনানন্দের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালক', 'ধূসর পাণ্ডুলিপি', 'বনলতা সেন', 'মহাপৃথিবী', 'বেলা অবেলা কালবেলা', 'রূপসী বাংলা'। 'কবিতার কথা' তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ এবং 'মাল্যবান' ও 'সুতীর্থ' তাঁর বিখ্যাত দুইটি উপন্যাস ।

জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

Content added By

সুচেতনা.... নির্জনতা আছে - সুচেতনা নামে এক শুভ চেতনার কথাই এখানে বোঝানো হয়েছে। কবির কল্পনায় দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন এই চেতনার সবুজে বিরাজ করছে নির্জনতা। অর্থাৎ এই শুভ চেতনা সর্বত্র বিস্তারিত, বিরাজমান নয়।

এই পৃথিবীর..... সত্য নয় - সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি বহু যুদ্ধ-রক্তপাত প্রাণহানী সংঘটিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তবে এই ধ্বংসাত্মক দিকটিই পৃথিবীর শেষ সত্য নয় ।

আজকে অনেক.....পরিজন পড়ে আছে - প্রেম, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও পৃথিবীতে অগণিত প্রাণহানি, রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ অনেক

রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় ভালোবাসার পরিণামে। 

এই পথে আলো.... ক্রমমুক্তি হবে -  পৃথিবীব্যাপ্ত গভীর অসুখ বা বিপর্যয় থেকে মুক্তির পথই শুভচেতনা। ইতিবাচক এ চেতনার আলো প্রজ্বলনের মাধ্যমেই সকল বিপর্যয় থেকে পৃথিবী ও মানুষের মুক্তি ঘটবে। - 

মাটি পৃথিবীর টানে...   সব বুঝেছি -  ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সংকট প্রত্যক্ষ করে পৃথিবীতে মানবরূপে জন্ম না নেওয়াকে আপাতভাবে কাঙ্ক্ষিত মনে হলেও এই পৃথিবী ও শুভ চেতনা থেকে প্রাপ্তিই শেখাবধি আমাদের গভীরভাবে প্রাণিত ও ঋণী করে।

শাশ্বত রাত্রির..... অনন্ত সূর্যোদয়  - পৃথিবীর    অন্ধকার বা অশুভের অন্তরালেই আছে সূর্যোদয়, মুক্তির দিশা। সুচেতনার বিকাশেই এই আলোক জ্বাল পৃথিবীর দেখা মিলবে, এটিই কবির বিশ্বাস।

Content added By

"সুচেতনা" কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের 'বনলতা সেন (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। “সুচেতনা" জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এ কবিতায় সুচেতনা সম্বোধনে কবি তাঁর প্রার্থিত, আরাধ্য এক চেতনানিহিত বিশ্বাসকে শিল্পিত করেছেন। কবির বিশ্বাসমতে, সুচেতনা দূরতম দ্বীপসদৃশ একটি ধারণা, যা পৃথিবীর নির্জনতায়, যুদ্ধে, রক্তে নিঃশেষিত নয়। চেতনাগত এই সত্তা বর্তমান পৃথিবীর গভীরতর ব্যাধিকে অতিক্রম করে সুস্থ ইহলৌকিক পৃথিবীর মানুষকে জীবন্ময় করে রাখে। জীবমুক্তির এই চেতনাগত সত্যই পৃথিবীর ক্রমমুক্তির আলোকে প্রজ্বলিত রাখবে, মানবসমাজের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করবে। শাশ্বত রাত্রির বুকে অনন্ত সূর্যোদয়কে প্রকাশ করবে।

Content added By